ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে ২৫ দেশ : ঝুঁকিতে নেই বাংলাদেশ

বৈদেশিক ঋণ এবং মুদ্রার রিজার্ভ সংকটের কারণে ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে শ্রীলঙ্কার। বর্তমানে দেশটি দেউলিয়াত্বের পথে রয়েছে। তবে শ্রীলঙ্কার মতো এমন আরও ২৫টি দেশ রয়েছে, যাদের অর্থনীতিও ভয়াবহ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
ক্রমবর্ধমান ঋণ এবং মুদ্রাস্ফীতিতে জর্জরিত এসব দেশ এখন পাগল প্রায়। এদের অনেকেরই রিজার্ভ শূন্য। ঋণ পরিশোধে হচ্ছে ব্যর্থ। অর্থের অভাবে আমদানিও হচ্ছে না পণ্য।
তালিকায় থাকা দেশগুলো হলো— আর্জেন্টিনা, ইকুয়েডর, তিউনিসিয়া, ঘানা, মিসর, পাকিস্তান, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, এল সালভাদর, ইউক্রেন, বাহরাইন, নামিবিয়া, ব্রাজিল, এঙ্গোলা, সেনেগাল, রুয়ান্ডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, কোস্টারিকা, গ্যাবন, মরক্কো, তুরস্ক, ডোমেনিকান রিপাবলিক, কলম্বিয়া, নাইজেরিয়া,মেক্সিকো।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে এমন দেশের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে আর্জেন্টিনা। দেশটির বৈদেশিক ঋণ প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে তাদের মুদ্রা পেসোর অবমূল্যায়ন এত বেশি হয়েছে যে কালোবাজারেই বিক্রি হচ্ছে মূল্যের চেয়ে ৫০ শতাংশ কম দামে। সরকারি বন্ডের দাম পড়ে গেছে। বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২০ সেন্টে।
তালিকায় দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে মিসর এবং ইকুয়েডর। দেশ দুটোর ঋণ যথাক্রমে ৪৫ বিলিয়ন ও ৪০ বিলিয়ন ডলার। দেশ দুটির রিজার্ভ প্রায় শূন্য। অর্থের অভাবে বন্ধ রয়েছে আমদানিও।
তিউনিসিয়ার অবস্থাও আশঙ্কাজনক। দেশটির বাজেটে ঘাটতি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাকি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কুক্ষিগতকরণ ইত্যাদি কারণে দেশটিতে জনরোষ ক্রমেই বাড়ছে।
আফ্রিকার আরেক দেশ ঘানার অবস্থাও ভয়াবহ। বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপির ৮৫ শতাংশেরও বেশি ছাড়িয়ে গেছে। মূল্যস্ফীতির পরিমাণ ৩০ শতাংশ।
মিসরের অবস্থা ঘানার চেয়েও ভয়াবহ। দেশটির বৈদেশিক ঋণ জিডিপির ৯৫ শতাংশেরও বেশি। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো দেশটিতে চলতি বছরে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হবে, যা অসম্ভব।
এদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানের অবস্থাও এরই মধ্যে বেশ নাজুক হয়ে উঠেছে। দেশটির ইতিহাসে বর্তমানে সবচেয়ে কম; ৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। তাদের মোট রাজস্বের ৪০ শতাংশেরও বেশি ব্যয় করতে হয় ঋণ পরিশোধে। ফলে দেশের জন্য বাকি থাকে সামান্যই।
এছাড়া কেনিয়া, ইথিওপিয়া, এল সালভাদরসহ বাকি দেশগুলোরও অবস্থা একই রকম। এই দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক ঋণের বোঝা বিশাল।
ব্যতীক্রম বাংলাদেশ :
একটি দেশের অভ্যন্তরে উন্নয়নের স্বার্থে ঋণ নেয়া খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। তবে এই ঋণ পরিশোধের জন্য যদি উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকে সে পরিমাণ আয় না আসে তাহলে এর চাপ অন্যান্য খাতের উপর পড়ে। তার উপর মুদ্রাস্ফীতি এই চাপকে আরও কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়। ফলে চাপ সামলাতে না পেরে সে দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ে।
বাংলাদেশের বেশির ভাগ প্রকল্প থেকে আয় আসছে। ঋণের পরিমাণও খুবই সামান্য। রিজার্ভেও স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই বাংলাদেশের পরিণতি অর্থনৈতিক সংকটে থাকা অন্যান্য দেশগুলোর মতো হবে না বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।