শেখ হাসিনার তাসের ঘর : তথ্যের বিশাল ফারাক যে নিবন্ধে

সম্প্রতি ‘হিন্দুস্তান টাইমসে’একটি নিবন্ধ লিখেছেন ‘অভিনাষ পালিওয়াল’ যিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু মনগড়া ও আপত্তিকর গল্প বলেছেন। গল্প এই কারণে যে তিনি এই নিবন্ধে নিরেট কোন তথ্য দেননি।
তথ্য দিতে পারেন নি কারণ বাংলাদেশ সম্পর্কে তার তেমন কোনও ধারণাই নেই। তিনি বসবাস।করেন সুদূর কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে। এছাড়া যেসব তথ্য বাংলাদেশ বা ভারতের কোন সংবাদিকও জানেন না,সেসব তথ্য তিনি বলছেন সুদূর কম্বোডিয়াতে বসে।
যেমন প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে যে, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন গত মাসে এক রাজনৈতিক চাপ সামলাতে ভারত সফরে এসেছিলেন। কিন্তু তাকে সিলেট ও আসামের বন্যা পরিস্থিতি নিয়েও মাথা ঘামাতে হচ্ছে। প্রকৃতি যেন বুঝিয়ে দিয়েছে যে এই দেশটিতে সবকিছু খুব একটা ভাল যাচ্ছে না।
কিন্তু নিবন্ধে বলা হয়নি, কোন রাজনৈতিক চাপ সামলাতে তিনি ভারতে এসেছিলেন? ভারত সফরের পর সেই চাপ বাংলাদেশ উৎরে গেছে কিনা। যদি বলতে পারতেন তাহলে সেটি হতো একটি নিরেট তথ্য। কিন্তু তার বদলে তিনি রাজনৈতিক সমস্যার নমুনা হিসেবে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতিকে তুলে ধরেছেন। যেই বণ্যা প্রতিবছরই কমবেশি ভারত-বাংলাদেশের দুই কূল ভাসিয়ে নেয়।
প্রতিবেদনে এর পরেই বলা হয়েছে, সম্প্রতি পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের ঝকমকে দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা, ইসলামপন্থীদের দমিয়ে রাখা কিংবা শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর দ্বন্দ্বকে নিপুণতার সঙ্গে সামলানোর দক্ষতা — এই সব কিছুর আড়ালে লুকিয়ে আছে কঠিন এক বাস্তবতা।
এই কথার মাধ্যমে তিনি পক্ষান্তরে শেখ হাসিনার দক্ষতার প্রমাণই দিয়েছেন। পদ্মাসেতু নির্মান, চরমপন্থী নিয়ন্ত্রণ অথবা শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোকে সুনিপূনভাবে সামলানো নিঃসন্দেহে একজন সরকার প্রধানের দক্ষতা।
আর কঠিন বাস্তবতা বলতে এরপরের লাইনেই তিনি লিখেছেন, শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদ ও অর্থনৈতিক দুর্দশার কথা।
অথচ কর্তৃত্ববাদ ছাড়া একটি সরকারকে সার্বভৌমই বলা যায় না। এটি ছাড়া কোন কিছু হাসিলও করা যায় না। আর শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত যা বলেছেন তার সবই হাসিল করেছেন।
প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক দুর্দশার কথা বলা হয়েছে, যেটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে বর্তমানে সারা বিশ্বেই একটি অর্থনৈতিক সংকট চলছে। ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। ডলারের দাম বাড়ছে, নিত্য পন্যের দাম বাড়ছে। আর এই সমস্যা বাংলাদেশের একার নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যা।
সবচেয়ে স্ববিরোধী কথাটি হচ্ছে, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ‘হাসিনার পায়ের নিচের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে উঠছে। অথচ এই প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে শেখ হাসিনা কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে যার পায়ের নিচে মাটি নেই, তিনি কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠেন কিভাবে?
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে ২০২৪ সাল থেকে শুরু হবে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের কিস্তি। সব মিলিয়ে এই চাপিয়ে দেয়া স্থিতিশীলতা এবং বাহ্যিক চাকচিক্য হারানো এখন শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার।
উত্তরটি হচ্ছে, বাংলাদেশ জন্মের পর এখন পর্যন্ত কোন ঋণ পরিশোধে অপারগ হয়নি। ২০২৪ সাল থেকে যেই ঋণ পরিশোধ করা শুরু হবে সেটি প্রকল্প হাতে নেয়ার সময়ই হিসেব করা হয়েছে। তাই বিগত ৫০ বছর যেভাবে ঋণ গুলো শেধ হয়েছে এবারও সেভাবেই ঋণ শোধ হবে। সূদুর কম্বোডিয়াতে বসে বাংলাদেশ সম্পর্কে মৌলিক ধারণা না রেখেই কল্পনাপ্রসূত চিন্তা ভাবনা দিয়ে বাঙলাদেশের হিসেব মেলানো সহজ নয় বটে।